বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় বেশ রোমাঞ্চিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী রুহুল আমিন (৪০) কিন্তু শেষ দেখা হলো না । ২৪ বছর পর দেশে ফেরার আনন্দ তাঁকে ঘিরে ধরেছিল। মায়ের কাছে আসতে ব্যাকুল ছিলেন তিনি। বিমানবন্দরে নেমে ফোন করে মাকে বলেছিলেন, ‘দেশে পৌঁছেছি।
বাড়ি আসছি। দেখা হবে মা।’ তবে মাকে শেষ দেখা হলো না রুহুল আমিনের। দীর্ঘদিন পর রুহুল আমিন বাড়ি ফিরেছেন, তবে বাক্সবন্দী লাশ হয়ে। ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন তিনি।
আর-পড়ুনঃ রাজধানীর কাপ্তান বাজার এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা
শেষ দেখা হলো না
গত বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিমানবন্দর থেকে বাড়ি ফেরার পথে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিজয়নগর এলাকায় পাথরবোঝাই একটি ট্রাকের ধাক্কায় রুহুল আমিন নিহত হন। তাঁর বাড়ি বিয়ানীবাজারের কুড়ারবাজার ইউনিয়নের খশির নামনগর গ্রামে।
এ ঘটনায় আহত হন পরিবারের আরও চার সদস্য। আহত ব্যক্তিরা হলেন রুহুলের বাবা আলিম উদ্দিন, ছোট ভাই নুরুল আমিন ও ফখরুল আমিন, মামাতো ভাই এমরান আহমদ এবং মাইক্রোবাসের চালক বাদশাহ মিয়া। ঘটনার পর থেকেই পরিবারে চলছে শোকের মাতম।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, কিশোর বয়সেই সংসারের হাল ধরতে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় রুহুল আমিন। যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে ২৪ বছর পর দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেলেন তিন সপ্তাহ ধরে।
আর-পড়ুনঃ বিজ্ঞানীর সম্মিলিত চেষ্টায় এ জীবন্ত কংক্রিট তৈরি
অবশেষে বুধবার সন্ধ্যায় দেশে ফিরে বাড়ি ফেরার পথেই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাতে হয়েছে তাঁকে। বাড়িতে বাক্সবন্দী অবস্থায় বৃহস্পতিবার ভোরে নিয়ে আসা হয় রুহুল আমিনের মরদেহ।
ছেলের এমন আকস্মিক মৃত্যুতে সব এলোমেলো হয়ে গেছে। ছেলের মৃত্যুর খবরে কিছু সময় পরপর বিলাপ করে মূর্ছা যাচ্ছেন মা আমেনা বেগম। ছেলেকে আদর করে ডাকলেও জবাব দিচ্ছে না কেন—এমন প্রশ্ন করছিলেন সবার কাছে। তবে উত্তর দিতে পারছিলেন না উপস্থিত কেউই। সবার চোখে ছিল অশ্রু।
বাবা আলিম উদ্দিন বলেন, ছেলে বহু বছর ধরে বিদেশে থাকেন। সেখানে স্থায়ী নাগরিক (গ্রিন কার্ড) না হওয়ায় দেশে ফিরতে পারছিলেন না। সম্প্রতি নাগরিকত্ব পাওয়ার পর দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তাঁর বিয়ের জন্য মেয়ে দেখা হচ্ছিল। বাড়িতে উৎসবের আমেজ ছিল।
তিনি বলেন, ‘ঢাকার হজরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে আনতে আমরা মাইক্রোবাস নিয়ে গিয়েছিলাম। বিমানবন্দরে নেমে মায়ের সঙ্গে কথা বলে গাড়িতে উঠেছিল রুহুল। চালকের পেছনের আসনে বসেছিল সে।
আর-পড়ুনঃ জন্মনিয়ন্ত্রক অষুধ বাড়িয়ে দিতে পারে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি! দাবি বিজ্ঞানীদের
পথে হঠাৎ একটি পাথরবোঝাই ট্রাক রুহুলের পাশে ধাক্কায় দেয়। এ সময় রুহুলের মাথা থেকে রক্ত আমার গায়ে ও হাতে এসে পড়ে। এরপর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। বাড়ি আসা পর্যন্ত আমার জ্ঞান ছিল না।’
রুহুলের স্বজনেরা জানান, আহত ব্যক্তিদের প্রথমে ব্রাক্ষণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে রুহুলের দাফন হয়।